ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে যে নেতিবাচক প্রচারণা চালছে তা মোকাবিলার তাগিদ দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বলেছেন, যে প্রোপাগান্ডাগুলো হচ্ছে তার কাউন্টার করতে হবে। এ বিষয়ে দেশীয় গণমাধ্যম কর্মীদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে গ্রাউন্ড রিয়েলিটি তুলে ধরার অনুরোধ জানান তিনি। মি. হোসেন বলেন, তারা গ্রাউন্ডে না থেকে একটা পজিশন নিয়েছে। এখান থেকে অনেক ক্ষেত্রে কিছু ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। এটা কাউন্টার করতেই হবে। সোমবার বিকেলে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা’য় প্রায় অর্ধশতাধিক বিদেশি কূটনীতিকের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া প্রধানমন্ত্রী (সদ্য সাবেক) শেখ হাসিনাকে ভারত দীর্ঘদিন আশ্রয় দিলে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উঠানামার আশঙ্কা নাকচ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাকে হাইপোথিক্যাল (অনুমানমূলক) কোয়েশ্চন উল্লেখ করে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে পাল্টা প্রশ্ন রাখেন। বলেন, একজন যদি কোনো এক দেশে গিয়ে থাকেন, তাহলে ওই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে কেন? এর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্যানভাসটি ‘অনেক বড়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেকোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে স্বার্থই মুখ্য। বন্ধুত্বটাও স্বার্থ বিবেচনায় হয়ে থাকে। এখানে ভারতের স্বার্থ আছে; ভারতেও আমাদের (বাংলাদেশের) স্বার্থ আছে। কাজেই সেই স্বার্থকে আমরা অনুসরণ করবো। বিদ্যমান সুসম্পর্ক বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।কূটনৈতিক ব্রিফিং এবং সংবাদ সম্মেলন উভয় অনুষ্ঠানে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের সহিংসতা, মানুষের ক্ষতি, অগ্নিসংযোগ কিংবা অত্যাচার অন্তবর্তীকালীণ সরকার বরদাশত করতে বলে বলে সাফ জানান তিনি। উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতিক সময়ের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করা হবে। সব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। অত্যাচারের কারণ রাজনৈতিক বা ধর্মীয় যাই হোক অপরাধকে অপরাধ হিসাবেই দেখা হবে। মিস্টার হোসেন বলেন, যার মতাদর্শ যাই হোক, কারও প্রতি অত্যাচার করলে শাস্তি পেতেই হবে। কোন অবস্থাতেই কারও প্রতি বিরূপ বা বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না, করলে আইন সেটা দেখবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উপস্থিত বিদেশি কোন কূটনীতিক আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেননি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়েও তাদের কোন জিজ্ঞাসা ছিলো না। উপদেষ্টা বলেন, আমরা নিজে থেকে বলেছি, যারা পরিবর্তনটি এনেছে, জীবন দিয়েছে তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। তারা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য এতোগুলো জীবন বিসর্জন দেয়নি। আমরাও অনুধাবন করি রাষ্ট্র, সমাজে জরুরি কিছু রিফর্মের প্রয়োজন। এ রিফর্মের জন্য ঠিক যেটুকু সময় থাকা দরকার সেটুকু সময়ই আমরা (অন্তর্বতী সরকার) থাকবো। এর বেশি থাকবো না, কমও না। দেশে সর্বজনীন মানবাধিকার নিশ্চিতে বিদেশি বন্ধু-উন্নয়ন সহযোগীদের সুপারিশ সরকার আমলে নিয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বিদায়ী সরকারের পরিকল্পনায় থাকা বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন এনগেজমেন্ট আটকে যাওয়া প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ঠিক এই মুহূর্তে আমরা কোনো কিছু থেকে সরে যাবো এমন না। যার সঙ্গে যে চুক্তি আছে বা কমিটমেন্ট আছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বা দ্বিপক্ষীয় ব্যাপারে সেগুলো কিন্তু যে কমিটমেন্ট বাংলাদেশ করেছে অবশ্যই আমাদের রক্ষা করতে হবে। যেখানে আমাদের মনে হবে স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে সেখানে আমাদের স্বার্থটা সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিবো। অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণ বিদেশি কোনো শক্তির হাতে কিনা? এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাফ জবাব দেন।বলেন, বাইরের কারও নিয়ন্ত্রণে সরকার নেই। বরং উপদেষ্টা কাউন্সিলই দেশ পরিচালনা করছে। তিনি এটাকে ‘ক্ষমতা’ না বলে দায়িত্ব বলা সমীচীন বলে উল্লেখ করেন। দেশে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার দিনরাত কাজ করছেন বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। কূটনীতিক ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ভারত, চীন রাশিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারসহ প্রায় ৬৪ জন কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন সেগুনবাগিচা।
Leave a Reply