উত্তরের হিমেল হাওয়া ও কুয়াশায় রাজধানীসহ দেশজুড়ে বইছে কনকনে শীত। পৌষের বিদায় লগ্নে উত্তরে শিরশিরে ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশার আবর্তে রাজধানীসহ সারাদেশ কাঁপছে কনকনে শীতে।
দেশের অধিকাংশ এলাকায় শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সূর্যালোক ছিল প্রায় অদৃশ্য। ঘন কুয়াশা ঘিরে ছিল চরাচর জুড়ে। অপরাহ্নের পর কুয়াশার ভারি আবরণ প্রায়ান্ধকার পরিবেশের সৃষ্টি করে। এদিন চলতি মৌসুমের শীতলতম দিবানিশি পার করেছেন রাজধানীবাসী। এছাড়াও শীতে কাঁপছে দেশের যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, নাটোর, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ, রংপুর, ও দিনাজপুর।
শনিবার সকালে ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশা, হিমেল হাওয়া আর হাড় কাঁপানো শীতে দেশের উত্তরাঞ্চল, পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জবুথবু অবস্থা গরিব মানুষের। শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
এদিকে, তীব্র শীতে রোগবালাই বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে। শীতে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু-পাখিরও কাহিল অবস্থা। কুয়াশায় বিমানের ওঠানামা ও নদীতে ফেরি চলাচল ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ রাখার ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বিঘ্ন ঘটছে সড়কে যানবাহন চলাচলেও।
আবহাওয়া গবেষকরা বলছেন, শৈত্যপ্রবাহের বিস্তৃতি না থাকলেও সূর্যালোকের স্বল্পতায় তাপমাত্রা বাড়ছে না। ফলে শীতের অনুভূতি তীব্রতর হচ্ছে। আকাশে মেঘ আর ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের তীব্রতা ভূপৃষ্ঠে ছড়াতে পারছে না। এতে দিনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধানও কমে গেছে। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমশীতল বাতাসের পরিমাণও বেড়েছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি। এজন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। আগামী ১৪,১৫ ও ১৬ তিন দিন ভারী কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ অব্যাহত থাকবে। ফলে শীতের তীব্রতা বাড়বে। শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে আগামী সপ্তাহে ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে সারাদেশে। বৃষ্টির পর তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে আরেক দফা শৈত্যপ্রবাহের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে জানান, দেশব্যাপী চলমান কুয়াশার বিস্তার থাকবে সপ্তাহ জুড়ে। শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে দেশব্যাপী উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির পরই আবারও সারা দেশে ভারী কুয়াশার বিস্তার লাভ করবে। শনিবার পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব দিকের বিভাগগুলোর ওপরে কুয়াশা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের বিভাগগুলোর ওপরে কুয়াশা কম থাকলেও । সপ্তাহের শেষের দিকে আবারও রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কোনো কোনো জেলার ওপরে সকাল ৬টার সময় তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমেছে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, আগামী সপ্তাহে কিছু কিছু জায়গায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে। এতে তাপমাত্রা কিছুটা কমে কোনো কোনো জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ঘন কুয়াশা খুব তাড়াতাড়ি কমবে না। আগামী তিন দিন কুয়াশা এমন থাকতে পারে। আজ থেকে ধারাবাহিকভাবে শৈত্যপ্রবাহের ব্যাপ্তি ধীরে ধীরে কমে আসবে। শীত কমতে শুরু করে আবার মঙ্গলবার থেকে মেঘ দেখা দিতে পারে। তাতে কোথাও কোথাও শীতের অনুভূতি তীব্র আকারে আবার বাড়তে পারে।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ একই রকম থাকতে পারে ঢাকার শীতল পরিবেশ। সারা দেশে মধ্যরাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও তা গড়াতে পারে দুপুর পর্যন্ত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে নির্দিষ্ট সময় ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে বলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে বলে মাঝারি এবং তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে বলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে বলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
চার ঘণ্টা বন্ধ ছিল ফেরি: রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঘন কুয়াশায় চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফেরি চলাচল শুরু হয়। ঘন কুয়াশায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ৪০ মিনিটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। পরে কুয়াশা কমে গেলে গতকাল সকাল সাড়ে ৬টায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ফ্লাইইট শিডিউল বিপর্যয় :ঘন কুয়াশা থাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগামী আটটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। শুক্রবার সকালে বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ঘন কুয়াশা থাকায় অনেক ফ্লাইট গতিপথ বদলাতে বাধ্য হয়। সৌদি আরবের দাম্মাম থেকে আসা বিমানের একটি ফ্লাইট কলকাতায় অবতরণ করেছে।
Leave a Reply