অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। এ নিয়ে একটি ভিডিও রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা। এতে বলা হয়েছে, গত ৫ই আগস্ট প্রধানমন্ত্রীত্ব এবং দেশ ছেড়েছেন হাসিনা। তার তিনদিন পরই দেশে ফিরেছেন ইউনূস। শপথ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে।ইউনূস যে বছর নোবেল পেয়েছেন সে বছরই বাংলাদেশে মেয়াদ শেষ হয় খালেদা জিয়া সরকারের। তদারকের সরকারের মসনদে কে বসবেন তা নিয়ে বিক্ষোভ-জমায়েতে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাশ হাতে নেয় সেনা। বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়। শোনা যায়, সে সময় তদারকি সরকারের মাথায়/মসনদে বসার জন্য সেনাবাহিনী ইউনূসকে প্রস্তাব দিয়েছিলো। সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন সূত্রে দাবি, এত অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব নিতে রাজি হননি ইউনূস। ২০০৭ সালের জানুয়ারীতে ফখরুদ্দীন আহমেদকে তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে করা হয়। ফখরুদ্দীনের তদারকি সরকার দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হন খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমানও। গ্রেপ্তার হন অসংখ্য রাজনৈতিক আমলা এবং ব্যবসায়ী। অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই শীর্ষ নেত্রীকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করার জন্যই এসব পদক্ষেপ নেয় সেনা চালিত তদারকি সরকার। একেই মাইনাস টু ফর্মুলা বলে চিহ্নিত করেছিলো বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো। মাইনাস টু অর্থাৎ হাসিনা ও খালেদা মুক্ত বাংলাদেশ।২০০৭ সালে যখন মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে গোটা বাংলাদেশ আলোড়িত তখন রাজনৈতিক দল তৈরি করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। ২০০৬ সাল থেকেই তিনি আরও বেশকিছু বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মিলে দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির জন্য সরব হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে ‘নাগরিক শক্তি’ নামের একটি দল গড়ার কথা বলেন নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। পরে অবশ্য সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, রাজনীতি তার জায়গা নয়। ২০২৪ সাল। সেই রাজনীতির অলিন্দেই ফিরলেন মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে। প্রতিরক্ষা, সশস্ত্রবাহিনী, শিক্ষা, বাণিজ্য, রেল, কৃষিসহ ২৭টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রাখলেন নিজের হাতেই।২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফেরেন হাসিনা। একের পর এক দুর্নীতির মামলায় জর্জরিত হন ইউনূস। গ্রামীণ ব্যাংকের পদ থেকে অপসারিত হন। বাংলাদেশের অনেকে এবং বিশ্বের বড় রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবীরা তখন হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছিলেন। সরকার অবশ্য নিজেদের দায় অস্বীকার করে এসেছিলো বারবার। ইউনূসকে মাইনাস টু ফর্মুলার অন্যতম চক্রী ঘোষণা করেছিলো আওয়ামী লীগ। নানা সূত্রে দাবি করা হয়, সেই কারণেই ক্ষমতায় এসে ইউনূসকে দেড়শোর বেশি মামলায় জড়ান হাসিনা। হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই দেশ ছেড়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার আগের দিনই শ্রম সংক্রান্ত এক মামলায় নিষ্কৃতি পেয়েছেন ইউনূস। তার দু-দিন পরে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা অর্থ আত্মসাতের মামলা থেকেও অব্যাহতি পেয়েছেন। বাকী মামলাগুলোর ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। হাসিনার পদত্যাগকে দ্বিতীয় বারের জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ বলছেন ইউনূস। নতুন বাংলাদেশ কি নতুন রাজনীতির উত্থান ঘটবে নাকি ২০০৭-০৮ সালেরই চিত্রনাট্য ফিরলো নতুন ঢঙে!
Leave a Reply